রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন;৩১৮ তম পর্ব-জালাল উদ্দীন মাহমুদ
Home Page » সাহিত্য » রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন;৩১৮ তম পর্ব-জালাল উদ্দীন মাহমুদহাজেরা আপার জল চিকিৎসা-১৬
হাজেরা আপার জল চিকিৎসা নিয়ে সে সময় আমার মনে অপরাধবোধ থাকলেও আজ এখন সে কাজের জন্যে কোন অনুশোচনা বা অপরাধবোধ নাই। বরং আমার এ ক্ষুদ্রজীবন রঙে রঙে সাজাতে ঐ ঘটনাকে একটা রঙীন পালক মনে হচ্ছে। ঝাপসা ঝাপসা চোখে ধূসর ধূসর রঙে আজ যখন বছর ত্রিশেক আগের সে ঘটনা স্মরণ করছি তখন ভাবছি সে বয়সে আমি কেমনে কাল্পনিক এ অদ্ভুত চিকিৎসা পদ্ধতি আবিস্কার করতে পেরেছিলাম আর কেমনেই বা রফিক সাহেব এত বড় বিশাল নাটক মঞ্চস্থ করতে পেরেছিল। একটা ভূঁয়া বিষয়কেও যে জনপ্রিয় করা যায় তার উদাহরন রফিক সাহেবের এ ঘটনাটি। হাবিব ও পরবর্তীতে হাজেরা আপার সাক্ষী গুনে রফিক সাহেব কবিরাজ না হয়েও রীতিমত বিখ্যাত কবিরাজ হবার গৌরব অর্জন করেছিল। এবং হাজেরা আপার কারনে চিকিৎসা বাদ দিয়েও ঐ এলাকায় কিংবদন্তীতে পরিনত হয়েছিল।
একথা সত্য যে রফিক সাহেবের মত সর্ববিষয়ে পারদর্শী একজন কর্মকর্তা তাকে “ উচিৎ শিক্ষা” দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। রফিক সাহেবকে সে সময় প্রতিহত করতে পারায় কাজেম উদ্দিন স্যারকেও আজ আমার ”হিরো” মনে হচ্ছে। পেনাল্টি কিক প্রতিহত করলে একজন গোলকিপারকে যেমন মনে হয় । আমরা কাজেম উদ্দিন স্যারকে অসৎ কাজ থেকে নিবৃত্ত করার জন্য ক্ষুদ্র প্রয়াস হিসেবে জল চিকিৎসা করতে চেয়েছিলাম। মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলাম ,জানি না তা কতদূর অন্যায় ছিল । শেখ সাদী কিন্তু বলেছিলেন , যে মিথ্যায় মঙ্গল নিহিত ,তাহা অসৎ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত সত্য অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর।
যা হোক ,এক সময় কাজেম উদ্দিন স্যারও অন্য জেলায় বদলি হয়ে গেলেন। একদিন সুযোগ পেয়ে আমি ও রফিক সাহেব হাজেরা আপার কাছে ক্ষমা চাইলাম। আপাকে সব কথা খুলে বললাম। সত্য কথাটি হজম করতে হাজেরা আপার অনেক সময় লাগল। অনেক ক্ষণ সে চুপ থাকল। তারপর বলল, তোদের তো দোষ নাই। জালাল তো বারবার নিষেধই করেছিল । কিন্তু ঐ কাজেম উদ্দিন স্যার রফিকের নিকট থেকে চিকিৎসা নিতে আমাকে প্ররোচিত করেছিল। আর চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল রফিক নাকি আমার চিকিৎসা করবে না। তখন আমি অসুস্থ ছিলাম , আমারও চিকিৎসার দরকার ছিল। আমি বলেছিলাম জালাল যেহেতু ওখানে আছে তাকে বললেই রফিক অবশ্যই রাজি হবে। আসলে কাজেম উদ্দিন স্যার কি যেন কারনে জানি না আমাকে এ চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করেছিল। আর চিকিৎসা নেবার জন্য আমার মনেও কী যেন কী কারণে জেদ চেপে গিয়েছিল । আপনারা যতই নারাজি হচ্ছিলেন ততই জেদ বাড়ছিল। কাজেমউদ্দিন স্যার কিন্তু ভালো লোক ছিল না। অনেকের ক্ষতি করেছে । সে এমন নিখুঁতভাবে ক্ষতি করত যে ভুক্তভোগীও বুঝতে পারত না। আপনারা দু‘জন মিলে তাকে একটা শিক্ষা দিতে পারেননি কেন?
আমি বললাম, আপা আমরা তো তার জন্যেই ফাঁদ পেতেছিলাম আর বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও আপনি সে ফাদেঁ পা দিলেন।আবার জোনাল হেড স্যার আলামত দেখতে চেয়েছিলেন। এতে আমাদের মন ভেঙ্গে যায় , আমাদের আর কাজেমউদ্দিন স্যারের পীছে লাগা সম্ভব ছিল না। কারন প্রথম মিশন আনসাকসেসফুল হবার পর , যাই করতে যেতাম নির্ঘাৎ ধরা খেতে হতো। স্যার আমাদের দু‘জনের ব্যাপারে সতর্ক ও সন্দেহপ্রবণ হয়ে গিয়েছিল। আপাও আমাদের সাথে একমত হলেন।
হাজেরা আপার সাথে একটা মিটমাট হয়ে যাওয়ায় সেদিন অফিস শেষে বাসায় যেতে যেতে মনে হলো মাথার উপর থেকে যেন একটা চাপ কমে গেল।
কিন্তু বাসায় পৌছে আবার মন খারাপ হয়ে গেল। দুষ্ট লোক জেনেও আমরা কাজেমউদ্দিন স্যারকে হেনস্তা করতে পারি নাই বরং আরো তার অযৌক্তিক দাবী মিটিয়েছি, প্রতি মাসে টাকা ধার দিয়ে। কিন্তু আমাদের মতো ছোট অফিসারদের এসব বিষয়ে আর কিইবা করার ছিল, মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া।
এ প্রসঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা দেব এর একটা আপত্তিকর মন্তব্য মনে পড়ছে। ২০১৪ সালে রাজনীতিতে আসা প্রসঙ্গে তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন,“এটা (রাজনীতি) অনেকটা ধর্ষনের মত, চিৎকার করো নয়তো উপভোগ করো”।
কিন্তু কাজেমউদ্দিন স্যারের এসব বিষয় নিয়ে আমরা চিৎকারও করতেও পারিনি , উপভোগের তো প্রশ্নই আসে না।
বাসায় এসে এসব বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম আর নিজেকে অক্ষম মনে হচ্ছিল। এ সময় সান্ত্বনা দিলেন রবীন্দ্রনাথ-
“ওরে ভীরু তোর হাতে নেই ভূবনের ভার”।
সত্যিই তো আমার হাতে ভূবনের ভার নাই।
আজ যখন সে সব ঘটনা লেখা শেষ করতে চাচ্ছি তখন আর একটা চিন্তা মনে উঁকি দিচ্ছে। হাজেরা আপা যদি আমাদের নামে জোনাল অফিসে কমপ্লেন দিত তবে আমাদের নির্ঘাৎ বাহিরের কোনো জেলায় বদলি হয়ে যেত। তখনকার জোনাল হেড সে রকম মানসিকতারই ছিলেন। ভাগ্য ভালো যে হাজেরা আপা তা করেনি আর রেস্ট নিয়েই তার অসুখটা ভালো হয়ে গিয়েছিল। ছোট-খাটো অনেক অসুখই শুধু রেষ্টেই সেরে যায় । তাছাড়া অফিসার সমিতির ইলেকশনের কারনেও আপা নির্মম চিকিৎসার বিষয়টি আপস রফার দৃষ্টিকোন থেকেই দেখেছিলেন ।
সে সময় বদলি হয়ে গেলে আমাদের জীবনের ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো । আমার আত্মজীবনীতে হয়তো আর একটা ব্যাংক শাখার নাম এসে যেত। হয়তো অন্য জেলার –অন্য বিভাগের। রফিক সাহেবের অভিনয় ক্ষমতা ,পরাক্রমতা আর আমার সামান্য বিদ্যা কোন কিছুই তা হয়তো ঠেকাতে পারত না।
ভাগ্যম ফলতি সর্বত্রম, ন বিদ্যা ন পৌরুষ । ভাগ্যই সব জায়গায় ফল দেয়।কপালে না থাকলে বিদ্যা বা পরাক্রমতা কোনও কিছুতেই কাজ হয় না। কথাটি আজ বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে।
////
রফিক সাহেবের কথা বারবার মনে হচ্ছে । বিখ্যাত রেলওয়ে জংশন সান্তাহারে থাকে সে। নওগাঁ ও বগুড়া এ দুই জেলার মিলন স্থলে অবস্থিত সান্তাহার । তালোড়াও সেখান থেকে খুব কাছে। তার ছেলে অগ্রণী ব্যাংকের হেড অফিসে আছে । মেয়ে- জামাইও ঢাকায় থাকেন । করোনাকালে ঢাকায় এসেছিল , দেখা হয়নি। কতোবার ভেবেছি একবার তাকে আমার কাছে নিয়ে আসি।
এ সব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হলো –রফিক সাহেব যেন আমাকে ডেকে ডেকে বলছে উঠুন উঠুন কাজেম উদ্দিনের মতো দুষ্টু লোক দিয়ে চারদিক ভরে যাচ্ছে –সবার জল চিকিৎসা করতে হবে ।
মিন্নাত হাজির হয়ে বলল-যারা ডুবে ডুবে জল খায় তাদের চিকিৎসা কেমনে করবেন ? এরপর সে বেদম হাসতে লাগল।আজ তাকে ধমক দেবার কেউ নাই।
মনে হলো দুর থেকে জাঁহানুর না না করে বাঁধা দিচ্ছে। বছর ত্রিশেক আগে যুক্তি দেখিয়ে যেমন করে বাঁধা দিয়েছিল । জল চিকিৎসা করে দুষ্ট লোকদের কাউকেও লাইনে আনতে পারবেন না। রফিক সাহেব তার বাঁধা মেনে নিল। জাঁহানুর বলেই চলেছে আমাদের মতো ছোটখাটো লোকদের বড় কথা মানায় না। তাছাড়া সে তারুণ্যও আমাদের নাই। আমি জাঁহানুরে বাঁধা পুরাপুরি মেনে নিতে পারলাম না। সবাই কে তো ডাক দিতে পারি।
মনে হলো ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাণপুরুষ রংপুরের কৃষক নুরুলদীন যেন কী বলতে চায় । সৈয়দ শামসুল হকের ভাষায় -
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমারই দেশে এ আমার দেহ থেকে রক্ত ঝরে যায়
ইতিহাসে, প্রতিটি পৃষ্ঠায়।
আমার ঘোর কেটে গেল। বিছানায় নেতিয়ে পড়লাম । মনে হলো সৌন্দর্য, সজীবতা, জীবনীশক্তি, আর উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা আমাদের কাছ থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে।
কিন্তু আশা ফুরায় না । মনে জাগে আমরা না পারি , কেউ না কেউ ঠিকই একদিন দুষ্টের দমনে এগিয়ে আসবে -
অভাগা মানুষ যেন জেগে ওঠে আবার এ আশায়
যে, আবার নূরলদীন একদিন আসিবে বাংলায়,
আবার নূরলদীন একদিন কাল পূর্ণিমায়
দিবে ডাক,”জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়?
++++++++++++++++++++++++
ডিসক্লেইমারঃ-”রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন” অনেক পুরনো স্মৃতিনির্ভর আত্মজীবনীমূলক লেখা। স্মৃতি-বিভ্রাট তো ঘটতেই পারে , তাছাড়া মূল ঘটনা বর্ণনা করতে কাল্পনিক সংলাপ বা ঘটনা ,ইত্যাদি সন্নিবেশিত হয়ে থাকতে পারে।জ্ঞানমূলক আলোচনা সহজ করতে কল্পিত ঘটনাও থাকতে পারে। তাই বইটির প্রকাশিত এবং প্রকাশতব্য খন্ড /পর্বগুলোকে উপন্যাসধর্মী আত্মজীবনী হিসেবে গণ্য করতে হবে।কোন কোন ক্ষেত্রে ছদ্মনামও ব্যবহার করেছি। এ সব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কারো কোন আপত্তি থাকলে আমাকে জানালে তা সংশোধন করে নিব। //////////////////////////////////////////////////////////////////////////
(পরবর্তী পর্বে ”ম্যানেজার স্যারের জল চিকিৎসা )
বাংলাদেশ সময়: ৯:০৯:৪২ ● ৪১৫ বার পঠিত
পাঠকের মন্তব্য
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)-
জানা গেল এইচএসসির ফল প্রকাশের সময়
বৃহস্পতিবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ -
উৎপাদন শুরু হয়েছে কর্ণফুলী পেপার মিলে
বৃহস্পতিবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ -
ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে যা যা করতে পারবে সেনাবাহিনী
বৃহস্পতিবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ -
বাংলাদেশকে ৬০০ মিলিয়ন ইউরো দেবে জার্মানি
বৃহস্পতিবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ -
এবার শান্তরা ইতিহাস গড়তে চান ভারতেও
বৃহস্পতিবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ -
বাড়ছে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের বয়স
বৃহস্পতিবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ -
‘পেজার’ বিস্ফোরণে লেবাননজুড়ে নিহত ৯, আহত ২৮০০
বুধবার ● ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ -
আগস্ট মাসের বন্যায় মৃত্যু হয়েছে ৭৪ জনের এবং ক্ষতির পরিমান প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা
বুধবার ● ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ -
ঢাকা বিশ্বের পঞ্চম দূষিত শহর
বুধবার ● ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ -
টানা বৃষ্টির আভাস
বুধবার ● ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
-
জানা গেল এইচএসসির ফল প্রকাশের সময়
বৃহস্পতিবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ -
উৎপাদন শুরু হয়েছে কর্ণফুলী পেপার মিলে
বৃহস্পতিবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ -
ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে যা যা করতে পারবে সেনাবাহিনী
বৃহস্পতিবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ -
বাংলাদেশকে ৬০০ মিলিয়ন ইউরো দেবে জার্মানি
বৃহস্পতিবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ -
বাড়ছে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের বয়স
বৃহস্পতিবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ -
এবার শান্তরা ইতিহাস গড়তে চান ভারতেও
বৃহস্পতিবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আর্কাইভ
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]