ডিমের রেকর্ড দাম , ১৭০ টাকা ডজন
Home Page » জাতীয় » ডিমের রেকর্ড দাম , ১৭০ টাকা ডজন
বঙ্গ-নিউজঃ স্বল্প আয়ের মানুষের পুষ্টির বড় অংশ পূরণ করে ফার্মের মুরগির ডিম। সেটির দামও লাফিয়ে বেড়ে এখন রেকর্ড গড়েছে। গতকাল শনিবার খুচরা বাজারে ডিমের ডজন বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকা। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। দাম বাড়ার জন্য পাইকারি ব্যবসায়ী ও খামারিরা একে অপরকে দুষছেন। এমন পরিস্থিতিতে ডিমের দাম সহনশীল পর্যায়ে রাখতে করণীয় নির্ধারণে আজ রোববার বিকেলে সচিবালয়ে সভা ডেকেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। সভায় পোলট্রি খাতের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন। সভা থেকে ডিমের উৎপাদন খরচ ঘোষণা করা হতে পারে।
খোদ সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, বাজারে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। তারা বলছে, এক মাসে দাম বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।
খামারিদের দাবি, খামার পর্যায়ে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকা ৫০ পয়সায়। তাই খুচরা বাজারে ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১৩ টাকা হওয়া উচিত। তবে খামারিদের এ দাবিকে ‘মিথ্যা’ বলছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, খামার থেকে প্রতিটি ডিম কিনতে হচ্ছে ১২ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৪০ পয়সায়। ডিমের কেনা দরের তথ্যপ্রমাণও রয়েছে তাদের কাছে। মূলত খামার পর্যায়ে দাম বাড়ার কারণেই ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেড়েছে।
ভোক্তা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক ধরনের ‘গায়েবি এসএমএস’ দিয়ে সারাদেশে দাম নির্ধারণ করা হয়। গত বছর দামে কারসাজির কারণে ভোক্তা অধিদপ্তর ও প্রতিযোগিতা কমিশন কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করলেও তার কোনো সুরাহা হয়নি। তাদের শাস্তির আওতায় না আনার কারণে এবারও একই কাণ্ড ঘটছে।
সপ্তাহখানেক আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। এর পর কয়েক দফায় বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা দরে। তবে কেউ এক হালি ডিম কিনতে গেলে গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা। সেই হিসাবে ডজনের দাম দাঁড়ায় ১৮০ টাকা। এর পাশাপাশি ফার্মের সাদা ডিমের দামও বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। ফার্মের ডিমের কারণে হাঁসের ডিমের দামও বেড়েছে। যদিও দাম বেশি থাকায় বাজারে এর চাহিদা তুলনামূলক অনেক কম।
গত বছরও ডিমের অস্বাভাবিক দাম বেড়েছিল। তখন সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। এবার সেই দামও টপকে গেছে। ওই সময় ভোক্তা অধিদপ্তর ডিমের দাম বাড়ানোর পেছনে দায়ীদের চিহ্নিত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছিল। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে। যেগুলোর এখনও সুরাহা হয়নি।
ভোক্তা-সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাজারে একের পর এক নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাজারের ফর্দে করছেন কাটছাঁট। এর মধ্যে বেশ কয়েকদিন ধরে মাছের দামও চড়া। এতে ভোক্তারা আমিষের চাহিদা পূরণ করতে ডিমের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন। তবে ডিমের বাড়তি এ দাম এখন তাদের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে।
এ ব্যাপারে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন সমকালকে বলেন, ডিমের কারসাজির জন্য প্রান্তিক খামারিরা করপোরেট গ্রুপকে দায়ী করলেও মূলত এখানে ‘গায়েবি এসএমএস’ দিয়ে সারাদেশে একই দাম নির্ধারণ করা হয়। সে কারণে ডিমের দাম বাড়ছে। গত বছরের এ সময়ে কারসাজির জন্য কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তবে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। তিনি বলেন, যেহেতু কারসাজির হোতাদের শাস্তি হয়নি, সে কারণে অন্যরা অনিয়ম ও কারসাজির জন্য অনুপ্রাণিত হচ্ছে। ভোক্তা অধিদপ্তরের পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে এ কাজে সম্পৃক্ত হয়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ডিমের দামের বিষয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব অনুযায়ী, একটি ডিমের উৎপাদন খরচ পড়ে পৌনে ১১ টাকা বা ১১ টাকা। খামারিরা ৫০ পয়সা থেকে ৭৫ পয়সা মুনাফা করতে পারেন। খামার পর্যায়ে ডিম সাড়ে ১১ টাকায় বিক্রি হয়। তাই খুচরা বাজারে দাম সর্বোচ্চ ১৩ টাকা হওয়া উচিত। তিনি বলেন, সরবরাহ ব্যবস্থায় কোথাও না কোথাও অতিরিক্ত মুনাফা করা হচ্ছে। খামারিরা কত টাকা মুনাফা করবেন সেটি নির্ধারণ করা উচিত। দাম বাড়ার পেছনে কোনো সিন্ডিকেট থাকলে তাও সরকারকে বের করা উচিত। ক্ষুদ্র খামারিদেরও সুরক্ষা দিতে হবে। যখন ডিমের দাম ৯ টাকা ছিল, তখন অনেকে লোকসানে পড়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে উৎপাদন কমে গেছে।
তবে খামার পর্যায়ে দামের তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, কয়েকদিন খামার থেকে প্রতিটি ডিম পাইকারি কিনতে হয়েছে ১২ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৪০ পয়সায়। যেসব খামারি দাবি করছেন, ১১ টাকায় খামার পর্যায়ে ডিম বিক্রি করছেন, তাদের আমাদের মুখোমুখি করা হোক। গণমাধ্যম ও সরকারের সংস্থাগুলোর সামনে আনা হোক। কবে কত টাকায় ডিম কিনছি তাদের কাছ থেকে, সেসব তথ্যপ্রমাণ আছে আমাদের কাছে।
প্রান্তিক খামারিরাও দুষছেন করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে। বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ডিম ও ব্রয়লার মুরগির বাজারে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সিন্ডিকেট রয়েছে। এতে তারা লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, ‘ডিমের উৎপাদন খরচ ঠিক করে দেওয়া কঠিন। কারণ একেক খামারের একেক ধরন। কারও উৎপাদন খরচ বেশি, আবার কারও কম। দাম সহনীয় রাখতে এবং খামারিদের লোকসান কমাতে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছি।’
এদিকে ডিমের বাজারে নজরদারি জোরদার করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ঢাকার কাপ্তান বাজার ও মোহাম্মদপুরে ডিমের বাজারে অভিযানে নামে অধিদপ্তর। অভিযানে বিভিন্ন ফার্ম থেকে ডিম কেনা হলেও ক্যাশ মেমোতে ডিমের দর এবং মোট টাকার কথা উল্লেখ না থাকা, বিক্রিতে পাকা ক্যাশ মেমো না রাখা, মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করাসহ কয়েকটি অপরাধে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৩২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এদিন ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলায় ডিমের দাম তদারকি করেছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৭:৫৪ ● ১৭৭ বার পঠিত
পাঠকের মন্তব্য
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)-
ফিরছেন নাবিকরা এমভি আবদুল্লাহর মে’র মাঝামাঝি
রবিবার ● ২৮ এপ্রিল ২০২৪ -
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস হবে যেভাবে , নির্দেশনা মানতে হবে
রবিবার ● ২৮ এপ্রিল ২০২৪ -
বিবিআইএন চুক্তিতে যোগ দিতে বাংলাদেশের আহ্বান ভুটানকে
শনিবার ● ২৭ এপ্রিল ২০২৪ -
কিউএস ৪ স্টার পেল এআইইউ বিদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে
শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪ -
আশুলিয়ায় ছাত্রলীগের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালিত
বৃহস্পতিবার ● ২৫ এপ্রিল ২০২৪ -
সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ কমতে পারবে শেয়ারদর এক দিনে
বৃহস্পতিবার ● ২৫ এপ্রিল ২০২৪ -
থাইল্যান্ডে লাল গালিচা সংবর্ধনা প্রধানমন্ত্রীকে
বৃহস্পতিবার ● ২৫ এপ্রিল ২০২৪ -
আইএমএফ অগ্রাধিকার দেবে চার বিষয়ে
বুধবার ● ২৪ এপ্রিল ২০২৪ -
যেভাবে নিরাপদ সবুজ কারখানার দেশ হয়ে উঠল
বুধবার ● ২৪ এপ্রিল ২০২৪ -
শেয়ারবাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা সুশাসনের অভাবে
মঙ্গলবার ● ২৩ এপ্রিল ২০২৪
-
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস হবে যেভাবে , নির্দেশনা মানতে হবে
রবিবার ● ২৮ এপ্রিল ২০২৪ -
ফিরছেন নাবিকরা এমভি আবদুল্লাহর মে’র মাঝামাঝি
রবিবার ● ২৮ এপ্রিল ২০২৪
আর্কাইভ
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]