রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বাংলাদেশে: বিশ্বব্যাংক

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বাংলাদেশে: বিশ্বব্যাংক
বুধবার ● ২০ ডিসেম্বর ২০২৩


রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বাংলাদেশে

বাংলাদেশে ২০২৩ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। আগামী বছরও দেশটি একই পরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাবে। আর বিশ্বে রেমিট্যান্স আহরণে এ বছর বাংলাদেশ সপ্তম স্থানে অবস্থান করবে।

বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল নলেজ পার্টনারশিপ অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (কেএনওএমএডি) মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্রিফে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক ব্যালান্স অফ পেমেন্ট সংকটের কারণে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নীতির কারণে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার প্রবাসীরা কালোবাজারের সুবিধা নিতে এবং অনানুষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনে উৎসাহিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০২৩ সালে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৩ বিলিয়ন ডলার থাকবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।’

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে রেকর্ড ১২ দশমিক ৪৬ লাখ কর্মী বিদেশে গেছে। গত বছরে এ সংখ্যা ছিল ১১ দশমিক ৩৫ লাখ।

কর্মী রপ্তানি খাতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হলেও বিগত দুই পঞ্জিকা বর্ষে রেমিট্যান্সের প্রবাহ ২২ বিলিয়ন ডলারের আশপাশেই আটকে ছিল।

বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী বছর উপসাগরীয় দেশগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে। এই দেশগুলোই বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের প্রধান উৎস।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলভুক্ত (জিসিসি) দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক থাকতে পারে। পাশাপাশি তেলের দাম কম হওয়ায় ২০২৪ সালে ওই দেশগুলোতে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হতে পারে।

রেমিট্যান্সপ্রাপ্তিতে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে এ বছরও নিজের অবস্থান ৭ নম্বরে ধরে রাখতে পারবে বাংলাদেশ। গত নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ পর্যালোচনায় এমনটা মনে করছে বিশ্বব্যাংক। ২০২২ সালেও বাংলাদেশের অবস্থান ছিল সপ্তম। গত বছরের মতো এবারও বাংলাদেশের আগে থাকছে ভারত, মেক্সিকো, চীন, ফিলিপাইন, মিসর ও পাকিস্তান।

নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ পর্যালোচনা শেষে বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন হলো, এ বছর বাংলাদেশে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসতে পারে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ২০ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্বব্যাংক বলছে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি আগের দু’বছরের তুলনায় এ বছর কম। আগের দু’বছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ গড়ে প্রায় ৯ শতাংশ বেড়েছিল। ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ হতে পারে।

গত জুনে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, চলতি বছর এসব দেশে মোট রেমিট্যান্স আসতে পারে ৬৬৯ বিলিয়ন ডলার। তবে নভেম্বর শেষে সংস্থাটি বলছে, ওই প্রক্ষেপণের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশগুলোতে। ওইসিডি ও উপসাগরীয় দেশগুলোতে চাকরির বাজার শক্তিশালী হওয়ায় বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে সর্বাধিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে লাতিন এ ক্যারিবীয় দেশগুলোর। ৭ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে এর পরের অবস্থানে থাকছে দক্ষিণ এশিয়া।

চীনের রেমিট্যান্সে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পরও পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর রেমিট্যান্সে এ বছর প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ। সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে এটি হতে পারে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ।

তবে ডলারের মূল্যমান কমার কারণে ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ১ দশমিক ৪০ শতাংশ কমবে। মধ্য এশিয়া ও উত্তর আমেরিকায় রেমিট্যান্স প্রবাহ গত বছরের তুলনায় কমবে ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর কারণ ব্যাখ্যায় বিশ্বব্যাংক বলছে, ব্যাংকিং চ্যানেলের তুলনায় অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে বিনিয়ম হার বেশি থাকায় এসব দেশে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমেছে।

বাংলাদেশেও একই কারণে কাঙ্ক্ষিত রেমিট্যান্স আসছে না বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। বহু বছর কৃত্রিমভাবে বিনিময় হার ধরে রাখার পর ২০২১ সালের আগস্ট থেকে কিছুটা শিথিল করতেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান বৈধ চ্যানেলে প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়। খোলাবাজারে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো প্রতি ডলারের বিপরীতে যেখানে ১১৩ টাকা মিলেছে, সেখানে হুন্ডিতে মিলেছে প্রায় ১৩০ টাকা পর্যন্ত। এ কারণে অনেকে বৈধ মাধ্যম ছেড়ে অবৈধ প্রক্রিয়ায় হুন্ডিতে দেশে অর্থ পাঠিয়েছেন।

বিশ্বব্যাংক নভেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষেত্রে এ সমস্যাটির কথা উল্লেখ করেছে।

বৈশ্বিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এ বছর সারাবিশ্বে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে ৮৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে, যা গত বছরের চেয়ে ২৪ বিলিয়ন ডলার বেশি। এর মধ্যে ১৮৯ বিলিয়ন ডলারই পেতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশ। আবার এসব দেশের মধ্যে সর্বাধিক ১২৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাবে ভারত। আগের বছরের মতো এবারও শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, পুরো বিশ্বে শীর্ষে থাকবে দেশটি।

বিশ্বব্যাংক বলছে, এ বছর ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে। তবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভুটান ও মালদ্বীপের কমছে।

বিশ্বব্যাংকের সবশেষ প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৬৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স নিয়ে মেক্সিকো দ্বিতীয় অবস্থানে এবং ৫০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে চীন তৃতীয় অবস্থানে থাকবে। এ ছাড়া চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ অবস্থানে থাকবে ফিলিপাইন, মিসর ও পাকিস্তান। বাংলাদেশের পরে থাকবে নাইজেরিয়া, গুয়েতেমালা ও উজবেকিস্তান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:২৭:৩০ ● ৯০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ