
বঙ্গ নিউজ ডেস্ক:দেশে প্রথম ভ্যাকসিন প্লান্ট হতে যাচ্ছে মুন্সীগঞ্জে। সিরাজদীখানে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে এই কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গোপালগঞ্জে এই প্লান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে বর্তমান সরকার।
করোনাকালে টিকা সংকটের বিষয়টি সামনে এলে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ধরনের টিকা উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয় তৎকালীন সরকার। ২০২০ সালে গোপালগঞ্জে এসেনসিয়াল বায়োটেক অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার নামে ভ্যাকসিন প্লান্ট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত বছর গোপালগঞ্জে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) তৃতীয় কারখানার পাশে ৬ দশমিক ৮৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তবে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইডিসিএলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, অত্যাবশ্যক ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের উৎপাদন বাড়াতে এসেনসিয়াল ড্রাগসের রাজধানীর তেজগাঁওয়ের কারখানাটি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সিদ্ধান্তে মানিকগঞ্জে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। জমি অধিগ্রহণে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সেই সিদ্ধান্ত থেকেও সরে এসেছে সরকার। এই কারখানাও মুন্সীগঞ্জে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুটি কারখানা ৪০ একর জমিতে স্থাপন করা হবে।
এসেনসিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সামাদ মৃধা বলেন, ভ্যাকসিন উৎপাদনের কারখানায় বিদেশি বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া করবেন। প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনে ছয় মাস থেকে এক বছর বাংলাদেশে অবস্থান করতে হবে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও মানসম্মত খাবারের ব্যবস্থা করতে পাঁচতারকা মানের হোটেলে রাখতে হবে। গোপালগঞ্জে এ ধরনের ব্যবস্থাপনার সুযোগ নেই। ঢাকা থেকে দৈনিক যাতায়াত করে এই বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন না। সে জন্য ঢাকার পাশে মুন্সীগঞ্জে কারখানা হবে। মুন্সীগঞ্জে কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ৩১০ একর জমির মধ্যে ৪০ একর জমি নেবে ইডিসিএল। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিকের সঙ্গে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে জায়গা পরিদর্শন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল। আশা করছি, এ বছরের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হবে। ২০২৭ সালের মধ্যে ভ্যাকসিন উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানা গেছে, ৩ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভ্যাকসিন প্লান্টটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই কারখানায় ১৫ ধরনের টিকা উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্লান্টটিতে ২০২৮ সালের মধ্যে ছয় ধরনের ও ২০২৯ সালে আরও ৯ ধরনের টিকা উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০৩০ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
মো. সামাদ মৃধা বলেন, স্থান পরিবর্তনের ফলে প্রকল্পে কোনো প্রভাব পড়বে না। এমনকি ব্যয় বাড়বে না। কারণ, গোপালগঞ্জে অধিগ্রহণ করা জমি ইডিসিএলের আরেকটি কারখানার জন্য কাজে লাগানো হবে।
মানিকগঞ্জ নয়, তেজগাঁও কারখানাও যাচ্ছে মুন্সীগঞ্জ
দেশে ওষুধ উৎপাদনকারী একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) ৬০ বছরের পুরাতন কারখানাটি তেজগাঁও থেকে মানিকগঞ্জে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০২২ সালে। প্লান্ট আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা খরচ ধরে নতুন প্লান্ট তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পের সম্ভাব্য এলাকা মেঘশিমুল মৌজায় আগেই জমি কিনে কারসাজি করে দলিলে মূল্য বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এ পরিস্থিতিতে এই জমিতে প্রকল্প করতে গেলে ভূমি অধিগ্রহণে সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হবে জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। এর পর বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসকেঅপসারণ দাবিতে আন্দোলনে নামেন জাহিদ মালেকের অনুসারী নেতাকর্মীরা। এসব কারণে মানিকগঞ্জে কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ইডিসিএল ঢেলে সাজাতে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। দুই কারখানা তৈরি হবে সরকারি জায়গায়। এতে দ্রুত কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া আগের আমলে বন্ধ থাকা যন্ত্রপাতি সচল করতে কাজ চলছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রযুক্তি জ্ঞানের মাধ্যমে দক্ষ করতে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওষুধের কাঁচামালও ইডিসিএলের মাধ্যমে উৎপাদন করা হবে।