
বঙ্গনিউজ: বাংলাদেশ ব্যাংক ২৮ দিন মেয়াদী রেপো সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ায় ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট তীব্র হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাবে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার এক লাফে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। তহবিল কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো এখন সরকারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগে আগের চেয়ে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছে, যা সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনায় নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৯ জুনের নিলামে ট্রেজারি বিলের সুদহার ১২ শতাংশে উঠেছে, যা এপ্রিলেও ১১ শতাংশের ঘরে ছিল। একইভাবে, ৫ বছর মেয়াদী ট্রেজারি বন্ডের সুদহার ৮ এপ্রিলের নিলামে ১২.৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ১২ মার্চেও ১১.৫০ শতাংশ ছিল।
চলতি বছরের ১০ এপ্রিল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৮ দিন মেয়াদী রেপো সুবিধাটি বন্ধ করে দেয়। এই সুবিধার আওতায় ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য অর্থ ধার করত। এটি ব্যাংকগুলোর জন্য তারল্য বা নগদ অর্থ সংগ্রহের অন্যতম প্রধান উৎস ছিল। এই সুবিধা তুলে নেওয়ায় ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা তহবিলের পরিমাণ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায় এবং আকস্মিক তারল্য সংকট তৈরি হয়। ফলে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে তাদের বিনিয়োগের সক্ষমতাও সীমিত হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, ২০২৪-২৫ অর্থবছর সামনে রেখে সরকারের ঋণের প্রয়োজনীয়তাও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সুদহার বাড়াতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
তথ্য বলছে, গত ২৯ জুন সরকার ৯১ দিন, ১৮২ দিন এবং ৩৬৪ দিন মেয়াদী ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে প্রায় ১১,০০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এক্ষেত্রে যথাক্রমে ১২.০৯ শতাংশ, ১২ শতাংশ এবং ১২.০৩ শতাংশ হারে সুদ প্রদান করতে হয়েছে। অথচ গত ২৪ মার্চেও সরকার একই ধরনের বিলের মাধ্যমে ৬,৬৫২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল অনেক কম সুদে। তখন সুদহার ছিল যথাক্রমে ১০.৯০ শতাংশ, ১১.২৫ শতাংশ এবং ১১.৩০ শতাংশ।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১,৯৮২ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে এই পরিমাণ ছিল ২৬,২২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে ৯৩,৩৭১ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে এবং একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে ৪১,৩৮৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
সরকার অবশ্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ব্যাংক খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ১.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৯৯,০০০ কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছে।
উল্লেখ্য, ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে সরকার স্বল্পমেয়াদী এবং ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন করে থাকে। জুনের শেষ নিলামে ২, ১০, ১৫ এবং ২০ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সরকারি ট্রেজারি বন্ডের গড় সুদহার বেড়ে যথাক্রমে ১২.২৯ শতাংশ, ১২.৪০ শতাংশ, ১২.২৯ শতাংশ এবং ১২.৪৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।