বঙ্গ নিউজ ডেস্ক:বর্ষা বাংলার এক অনন্য ঋতু। বৃষ্টির ফোঁটায় প্রকৃতি যেমন নবজীবন পায়, তেমনি আমাদের মনেও নিয়ে আসে স্বস্তি। কিন্তু প্রকৃতির এই সৌন্দর্য কখনো কখনো শরীরের জন্য ডেকে আনে বিপদ। অনেকেই সামান্য বৃষ্টিতে ভিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন—তীব্র ঠান্ডা-জ্বর, ভাইরাল ইনফেকশন, হজমের সমস্যা এমনকি ডেঙ্গু বা টাইফয়েডের মতো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন রোগজীবাণুর বিস্তার ঘটে খুব দ্রুত। পাশাপাশি নোংরা পানি ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এই ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। আর এজন্যই বৃষ্টির দিনে একটু সচেতনতা হতে পারে বড় বিপদ থেকে রক্ষার পথ।

বৃষ্টিতে ভিজলেই কেন অসুস্থ হচ্ছেন?

বর্ষাকালে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা যখন হঠাৎ কমে যায়, তখন আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময় ঠান্ডাজনিত অসুখ, যেমন জ্বর, সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা দ্রুত সংক্রমিত হয়। আবার জলাবদ্ধতা ও অপরিষ্কার পরিবেশ মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করে, যার ফলে বাড়ে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মতো রোগের ঝুঁকি।

বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও আগে থেকেই অসুস্থ ব্যক্তিরা এই সময়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

সতর্কতা অবলম্বনই হতে পারে সুরক্ষার প্রথম ধাপ
আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা নিশ্চিত করতে বর্ষার দিনে নিচের কয়েকটি পরামর্শ মেনে চলুন:

১. বৃষ্টিতে ভিজে গেলে দ্রুত কাপড় বদলান ও শুকিয়ে নিন
ভেজা কাপড়ে বেশিক্ষণ থাকলে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় এবং ভাইরাল ইনফেকশন হতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে গরম পানিতে গোসল করে শরীর শুকিয়ে নিতে হবে।

২. সব সময় ফুটানো বা ফিল্টার করা পানি পান করুন
বর্ষাকালে পানির মাধ্যমে টাইফয়েড, হেপাটাইটিস ও ডায়রিয়ার মতো রোগ ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপদ পানি পান করাই একমাত্র উপায়।

৩. রাস্তার খাবার বা কাটা ফল এড়িয়ে চলুন
খোলা খাবারে এই সময় ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস জমে যায়। ফুচকা, চটপটি, কাটা ফল বা আইসক্রিম এই সময়ে পরিহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

৪. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
নখ, হাত, মুখ ও কাপড় পরিষ্কার রাখুন। বাইরে থেকে ফিরে হাত-পা ধুয়ে নিন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন প্রয়োজনে।

৫. বাসার চারপাশে জমে থাকা পানি সরিয়ে দিন
জমে থাকা পানি মশার বংশবৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরি করে। ছাদ, টব, ড্রেন কিংবা পরিত্যক্ত কন্টেইনার নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

৬. পর্যাপ্ত ঘুম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন
শরীরকে সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি যুক্ত ফল (কমলা, লেবু) বেশি করে খান।

৭. শিশু ও প্রবীণদের বিশেষ যত্ন নিন
তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় তারা দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তাদের ভেজা থেকে দূরে রাখুন এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান।

বিশেষজ্ঞ মতামত
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. তাহমিনা সুলতানা বলেন:
“বর্ষাকাল মানেই বাড়তি সতর্কতার সময়। একটুখানি অসাবধানতা থেকেও বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, সঠিক পানি ও খাবার গ্রহণ এবং শরীরের প্রতি যত্নবান হওয়াই হতে পারে সুস্থ থাকার মূল চাবিকাঠি।

বর্ষার সৌন্দর্য উপভোগ করুন, তবে সচেতন থাকুন।
একটু সতর্কতা আপনার পরিবারকে রাখতে পারে সুস্থ, নিরাপদ। বৃষ্টি উপভোগ হোক আনন্দে, অসুস্থতায় নয়।