
বঙ্গ নিউজ ডেস্ক:ঈদুল আজহা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই দিনটি ‘কোরবানির ঈদ’ নামে বেশি পরিচিত। এর মূল শিক্ষা হলো—আল্লাহর প্রতি নিঃস্বার্থ আনুগত্য ও আত্মত্যাগ। কোরবানির ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো এবং এটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় অনুশীলন হিসেবে বিবেচিত।
ইতিহাসের পেছনে যে ত্যাগের কাহিনি
কোরবানির সূচনা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সময় থেকে। তিনি আল্লাহর নির্দেশে স্বপ্নে দেখেন যে, তাঁকে তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে হবে। আল্লাহর আদেশ পালন করতে তিনি দ্বিধা করেননি। পুত্রকেও বলেছিলেন, এবং ইসমাইল (আ.)-ও আল্লাহর ইচ্ছায় নিজেকে উৎসর্গ করতে রাজি হন। কিন্তু যখন ইব্রাহিম (আ.) তাঁকে কোরবানি করতে উদ্যত হন, তখন আল্লাহ একটি দুম্বা পাঠিয়ে পুত্রের পরিবর্তে তা কোরবানির আদেশ দেন।
এই ঘটনা মানবজাতিকে শিক্ষা দেয়, সৃষ্টিকর্তার প্রতি সর্বোচ্চ আনুগত্য এবং আত্মত্যাগই প্রকৃত ঈমানের নিদর্শন।
কোরবানির তাৎপর্য
আল্লাহর প্রতি আনুগত্য:কোরবানি মূলত আল্লাহর আদেশ পালনের এক নিদর্শন। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, আমাদের জীবনে ঈমান ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসাই শ্রেষ্ঠত্ব পাওয়ার মাপকাঠি।
ত্যাগ ও সহানুভূতির শিক্ষা:কোরবানি শুধুই পশু জবাই নয়—এটি নিজের লোভ, অহংকার ও স্বার্থপরতাকে ত্যাগ করার প্রতীক।
সমতা ও ভ্রাতৃত্ব:কোরবানির গোশত আত্মীয়, প্রতিবেশী এবং গরিবদের মাঝে ভাগ করে দেওয়া ইসলামে সহানুভূতি ও সামাজিক ন্যায়ের আদর্শকে তুলে ধরে।
সংহতি ও উদারতা:এই দিনে ধনী-গরিব সকলেই একত্রে ঈদের নামাজ পড়েন এবং উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোরবানির তাৎপর্য
আজকের সমাজে কোরবানির শিক্ষা আরও প্রাসঙ্গিক। যেখানে স্বার্থপরতা ও বিভাজন বেড়ে চলেছে, সেখানে কোরবানির মাধ্যমে মানুষ নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে পারে, শিখতে পারে অন্যের জন্য কিছু উৎসর্গ করার মনোভাব।
কোরবানি শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি একটি নৈতিক ও আত্মিক অনুশীলন। ঈদুল আজহা আমাদের শেখায়—আল্লাহর আদেশের সামনে সমস্ত চাওয়া-পাওয়ার বিসর্জনই প্রকৃত ঈমানের পরিচয়। তাই আসুন, আমরা কোরবানির আত্মা ধারণ করি—আত্মত্যাগ, সহানুভূতি ও একতার মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলি।