
বঙ্গ-নিউজঃ নেপালে তীব্র বিক্ষোভ-সহিংসতার পর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি। শুক্রবার রাতে প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে তাঁর নাম ঘোষণা করার পরপরই তিনি শপথ গ্রহণ করেন।
৭৩ বছর বয়সী সুশীলা কারকি ছিলেন নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি। দায়িত্বকালেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর ‘শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি’ আলোচনায় আসে। এবার তাঁকেই বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হলো।
এর আগে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন। সরকারের সিদ্ধান্তে ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপ বন্ধ হয়ে গেলে রাজপথে নামে তরুণেরা। এর মধ্যেই পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষে এক দিনে প্রাণ হারায় অন্তত ১৯ জন। সহিংসতা থামেনি—পরবর্তী কয়েক দিনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১-এ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেয়। বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর সবার সম্মতিতেই সুশীলা কারকির নেতৃত্বে নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। আন্দোলনকারীদের দাবি, তিনি বর্তমান পার্লামেন্ট ভেঙে নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর পথ খুলে দেবেন।
তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে জেনারেশন-জেড (১৯৯৫-২০১০ সালে জন্ম নেয়া প্রজন্ম), সুশীলার নামের পক্ষে সরব ছিল। তাঁদের চোখে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক।
বিক্ষোভ চলাকালে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলাও ঘটে। বন্দিশালাগুলোতে বিদ্রোহ শুরু হয় এবং প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কয়েদি পালিয়ে যায়; এখনও ১২ হাজারের বেশি ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে বিক্ষোভকারী ২১ জন, কয়েদি ৯ জন, পুলিশ ৩ জন এবং আরও ১৮ জন বিভিন্নভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৩০০ জন।
এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে কাঠমান্ডুর পরিস্থিতি। কিছু দোকানপাট খুলেছে, সড়কে চলছে গাড়ি। সেনারা টহল দিচ্ছে, তবে সংখ্যায় আগের চেয়ে কম। পুলিশ সদস্যদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নেই, তারা লাঠি হাতে দায়িত্ব পালন করছে।
২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলোপের পর নেপালের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা। তবে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের হাত ধরে দেশটি কোন পথে এগোয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।