পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণের পথে স্বস্তির যাত্রা
Home Page » জাতীয় » পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণের পথে স্বস্তির যাত্রা
বঙ্গনিউজঃ ঢাকা থেকে পাটুরিয়া হয়ে যেসব মানুষ দক্ষিণের জেলাগুলোতে যেতেন, তাঁদের বড় অংশ এখন পদ্মা সেতু দিয়ে যাচ্ছেন। এতে যাতায়াতের দূরত্ব কমেছে, সময় কম লাগছে এবং ব্যয়ও কমেছে। গতকাল রোববার সাধারণ যানবাহন চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর মানুষ স্বস্তি ও আনন্দ নিয়ে সেতুটি দিয়ে যাতায়াত করেছেন।
কীভাবে দূরত্ব কমেছে, তা বুঝিয়ে দেওয়া যাক একটি উদাহরণ দিয়ে। ঢাকা থেকে পাটুরিয়া হয়ে বরিশালের দূরত্ব ২৪২ কিলোমিটার। গতকাল এই পথের কয়েকটি বাস কোম্পানি ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বাস ছাড়ে।
পদ্মা সেতু হয়ে এই বাসের বরিশাল যেতে দূরত্ব কমে দাঁড়ায় ১৫৬ কিলোমিটার। পাটুরিয়া হয়ে বাসে যে ভাড়া ৬০০ টাকা নেওয়া হতো, পদ্মা সেতু হয়ে তা নেওয়া হয় ৪২০ টাকা। ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার ভোগান্তিও আর নেই।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে পাটুরিয়ার বদলে পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াতে দূরত্ব কমেছে জেলাভেদে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত। ঢাকা থেকে বরিশালে গতকাল মানুষ বাসে সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টায় যেতে পেরেছেন, যা সেতু চালুর আগে স্বাভাবিক সময়েও পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা লাগত। ঈদযাত্রায় সময়ের বিষয়টি ছিল সম্পূর্ণ অনিশ্চিত।
তাঁরা পিরোজপুর থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়ার সর্বোচ্চ সময় নির্ধারণ করেছেন চার ঘণ্টা। সেভাবেই সফটওয়্যার সাজানো হয়েছে। সেতু হওয়ার পর ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট বাঁচবে বলে তিনি আশা করেন।
নাদিরুজ্জামান, দোলা পরিবহনের চেয়ারম্যান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। এই সেতু ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলাকে যুক্ত করেছে। গতকাল ভোর ছয়টা থেকে টোল দিয়ে সেতুতে সাধারণ যানবাহন চলাচল শুরু হয়। ভোরেই শত শত যানবাহন সেতুর টোল প্লাজায় ভিড় করে। অনেক মানুষ গিয়েছিলেন শুধু সেতুটি দেখতে। এ কারণে গতকাল ভোরে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় যানবাহনের চাপ বেশি ছিল। জটও তৈরি হয়। কিন্তু এর জন্য যাত্রায় বড় ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। ফলে মানুষ আনন্দ নিয়ে সেতু পারাপার হয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গতকাল দিনভর অনেক মানুষ তাঁদের যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। ছবি দিয়েছেন। অনেকে অবশ্য গাড়ি থেকে নেমে সেতুতে ছবি তুলেছেন, যা নিষিদ্ধ ছিল। যানবাহনের বড় অংশ ছিল মোটরসাইকেল। সেতুর মাওয়া প্রান্তে গতকাল সন্ধ্যায় একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী জয়দেব রায়, যিনি আহত দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। ওই দুজনকে আনার পর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। রাতেই সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, আজ সোমবার ভোর ছয়টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে।
এদিকে পদ্মা সেতুর নাটবল্টু খোলার অভিযোগে গতকাল একজনকে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি পদ্মা সেতুর নাট–বল্টু হাত দিয়ে খুলে দেখাচ্ছেন।
সকাল ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত সেতু দিয়ে ১৫ হাজার ২০০ যানবাহন চলাচল করেছে। টোল আদায় হয় ৮২ লাখ ১৯ হাজার ৫০ টাকা।
এদিকে শিমুলিয়া–কাওড়াকান্দি ফেরিঘাট থেকে একটি ফেরিও গতকাল ছেড়ে যায়নি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের উপমহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, যানবাহন এলে ফেরি চলবে। ওদিকে পাটুরিয়া–দৌলতদিয়া ঘাটে গতকাল যানবাহনের চাপ ছিল বেশ কম।
পদ্মা সেতু দক্ষিণের মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। সাধারণ যাত্রী, পরিবহনমালিক ও শ্রমিক সবার জন্যই স্বস্তি নিয়ে এসেছে।
খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ , বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব
যাত্রীরা যা বলছেন
পদ্মা সেতু হয়ে বাসে যাতায়াতকারী একাধিক যাত্রীর সঙ্গে গতকাল কথা হয় মাওয়া টোল প্লাজায়। তাঁরা জানান, পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে সময় লাগছে ছয় থেকে সাত মিনিট। যদিও সরকার সেতুতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ঠিক করেছে ৬০ কিলোমিটার। কিন্তু ফাঁকা রাস্তায় তা কেউ মানছে না। ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক দ্রুতগতির, চার লেনের। এই পথ এক ঘণ্টায় পাড়ি দেওয়া যাচ্ছে।
যাত্রীদের একজন মোরশেদ আলম শেখের বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারী। তিনি ভোরে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় আসেন। তিনি জানান, চিতলমারীর কুনিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ভোর পাঁচটার দিকে রওনা দেন। ঢাকার গুলিস্তানে পৌঁছে যান সকাল আটটার কিছু পরেই। সময় লেগেছে সোয়া তিন ঘণ্টার মতো।
এই যাত্রা নিয়ে উচ্ছ্বসিত মোরশেদ আলম তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়জীবন থেকে প্রায় ২০ বছর ধরে এই পথে যাতায়াত করেছি। আজকের (রোববার) যাত্রা ছিল সেরা। কারণ, অন্তত দেড় ঘণ্টা সময় বেঁচে গেছে, একবারের জন্য কোথাও আটকে যাওয়ার দুশ্চিন্তা হয়নি। বলা যায়, স্বস্তির যাত্রা।’
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের হিসাবে, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে বাগেরহাটের দূরত্ব ১৭৮ কিলোমিটার। বাগেরহাটে যাওয়ার আরেকটি পথ হচ্ছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট হয়ে। এ ক্ষেত্রে ফরিদপুর, মাগুরা, আড়পাড়া, যশোর, খুলনা হয়ে যেতে হয়। সওজের হিসাবে, এই পথের দূরত্ব ৩১০ কিলোমিটার। অর্থাৎ দুই পথের দূরত্বের পার্থক্য প্রায় ১৩২ কিলোমিটার। বাসের ভাড়াও পাটুরিয়া দিয়ে ৮৫০ টাকার বেশি। আর মাওয়া দিয়ে গতকাল দোলা পরিবহনে মোরশেদ আলম শেখ এসেছেন ৪৫০ টাকায়। তিনি জানান, মাওয়া হয়ে আগে ৪৭০ টাকা নেওয়া হতো।
সায়েদাবাদ ও গুলিস্তান থেকে দোলা পরিবহনের বাস যায় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও পিরোজপুরে। এই পরিবহনের কর্মীরা জানান, গতকাল সকালের দিকে ছেড়ে আসা সব কটি বাস সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় চলে এসেছে। দুপুরে বাসগুলোর কিছুটা বেশি সময় লেগেছে মহাসড়কে যানবাহন বেশি থাকায়।
দোলা পরিবহনের চেয়ারম্যান নাদিরুজ্জামান বলেন, তাঁরা পিরোজপুর থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়ার সর্বোচ্চ সময় নির্ধারণ করেছেন চার ঘণ্টা। সেভাবেই সফটওয়্যার সাজানো হয়েছে। সেতু হওয়ার পর ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট বাঁচবে বলে তিনি আশা করেন।
খুলনা যেতেও সময় কম লাগছে
ঢাকা থেকে পাটুরিয়া, ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, যশোর হয়ে খুলনার দূরত্ব ২৯২ কিলোমিটার। আড়পাড়া হয়ে গেলে দূরত্ব কিছুটা কমে হয় ২৭২ কিলোমিটার। সরকারি হিসাবেই এই দুই পথে খুলনা যেতে যথাক্রমে ৬৯১ ও ৭৩৭ টাকা ভাড়া। সময় সাত থেকে আট ঘণ্টা লেগে যায়। অন্যদিকে মাওয়া হয়ে গেলে খুলনার দূরত্ব ২৪৭ কিলোমিটার। ফেরি না থাকায় এখন সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় খুলনা যাওয়া যায়। ভাড়াও এই পথে কম।
পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, মাওয়া ফেরিঘাটে ফেরিতে ওঠার আগে যাত্রীবাহী যানবাহনকে গড়ে দুই ঘণ্টা ও পণ্যবাহী যানবাহনকে আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়। ফেরি পাড়ি দিতে লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। সেতু চালু হলে এই সময় লাগবে না।
অবশ্য পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় ঢোকার পথে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে মেয়র হানিফ উড়ালসড়ক থেকে নামতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। মেয়র হানিফ উড়ালসড়ক ও জুরাইন রেললাইনের ওপর নির্মিত উড়ালসড়কের মাঝখানে দোলাইরপাড়ে যানজট হচ্ছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মাওয়া থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক ধরে মেয়র হানিফ উড়ালসড়কের চানখাঁরপুল প্রান্ত দিয়ে নামতে ঘণ্টাখানেকের যানজটে পড়তে হয়েছে।
স্বস্তির ঈদযাত্রার আশা
আগামী মাস, অর্থাৎ জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঈদুল আজহা। প্রতিটি ঈদেই ঘরমুখী মানুষকে ফেরিঘাটের দুর্ভোগ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। এবার সেই দুর্ভোগ ঘুচবে বলেই মনে করছেন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণের মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। সাধারণ যাত্রী, পরিবহনমালিক ও শ্রমিক সবার জন্যই স্বস্তি নিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০:২০:৩৩ ● ৩৯৭ বার পঠিত
পাঠকের মন্তব্য
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)-
কবিতায় বিশেষ সম্মাননা পেলেন অধ্যাপক তারেক রেজা
বৃহস্পতিবার ● ৩০ নভেম্বর ২০২৩ -
কুয়েটে ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধরের অভিযোগ নৌকার মিছিল করায়
বৃহস্পতিবার ● ৩০ নভেম্বর ২০২৩ -
লিড নিয়েছেন কিউইরা টাইগারদের হতাশা বাড়িয়ে
বৃহস্পতিবার ● ৩০ নভেম্বর ২০২৩ -
টঙ্গীতে মধ্যরাতে যুবদলের মশাল মিছিল
বৃহস্পতিবার ● ৩০ নভেম্বর ২০২৩ -
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন
বৃহস্পতিবার ● ৩০ নভেম্বর ২০২৩ -
শেয়ারবাজার কিছুটা ইতিবাচক
বৃহস্পতিবার ● ৩০ নভেম্বর ২০২৩
-
লোডশেডিং কী জিনিস তরুণ প্রজন্ম জানেই না: সমাজকল্যাণমন্ত্রী
বুধবার ● ২৯ নভেম্বর ২০২৩ -
মুহঃফরহাদ মুর্তাজা প্রধান- এর কবিতা অন্যের জয়ে
বুধবার ● ২৯ নভেম্বর ২০২৩ -
দেবদূত হয়ে এলেন যারা
বুধবার ● ২৯ নভেম্বর ২০২৩ -
ডলি সায়ন্তনী বিএনএমে যোগ দেওয়ার কারণ জানালেন
বুধবার ● ২৯ নভেম্বর ২০২৩ -
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারও ‘একক’ ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে না
বুধবার ● ২৯ নভেম্বর ২০২৩ -
কিউইরা লাঞ্চের আগে ২ উইকেট হারালেন
বুধবার ● ২৯ নভেম্বর ২০২৩
আর্কাইভ
Head of Program: Dr. Bongoshia
News Room: +8801996534724, Email: [email protected] , [email protected]