মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়

Home Page » জাতীয় » মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়
সোমবার ● ১০ জুন ২০২৪


সংগৃহীত ছবি-বাংলাদেশের মাছের বাজার, মৎস উৎপাদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয়

বঙ্গ-নিউজ: মাছপ্রেমী বাঙালির জন্য সুখবর। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয় থেকে এগিয়ে দ্বিতীয় হয়েছে। আগে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীন এবার তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারত।

গত শনিবার জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রকাশিত বিশ্ব মৎস্য সম্পদ বিষয়ক প্রতিবেদন ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার ২০২৪’-এ এই তথ্য উঠে এসেছে। ২০২২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। দুই বছর পর পর এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

মূলত নদী, বিল, হাওর ও খোলা জলাশয়ের মাছ উৎপাদন এই প্রতিবেদনে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তবে পুকুর ও অন্যান্য জলাশয়ে চাষ করা মাছ ধরলে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয় থেকে দুই ধাপ পিছিয়ে এবার পঞ্চম হয়েছে।

এফএও-এর ২০২২ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তৃতীয়। তার আগে ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম।

মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ কী কারণে এগিয়ে গেল, জানতে চাইলে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মহাপরিচালক মো. জুলফিকার আলী বলেন, ‘বাংলাদেশ খোলা জলাশয়গুলোকে সুরক্ষিত করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘একই সঙ্গে ইলিশ অভয়ারণ্য তৈরি এবং প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করায় ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য প্রজাতির মাছও সুরক্ষিত হচ্ছে। এই উদ্যোগগুলোর সুফল হিসেবে আমরা মাছ উৎপাদনে আরও এগিয়ে গেছি।’

বিএফআরআই-এর হিসাবে, গত বছর (২০২৩) বাংলাদেশে মোট ৪৮ লাখ টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে ৩২ লাখ টন খামারে, ১৩ লাখ টন মিঠা পানি থেকে এবং বাকি অংশ সমুদ্র থেকে পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, খোলা জলাশয় থেকে উৎপাদিত মাছের অর্ধেকই আসলে ইলিশ। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে শুধু ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৬.৫ লাখ টন।

এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে, দেশের খোলা জলাশয়ে ২৬১ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ প্রজাতির কৃত্রিম প্রজনন ও উন্নত চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন বিএফআরআই-এর বিজ্ঞানীরা। পুকুরের পাশাপাশি বিল ও নদীতেও এসব মাছের পরিকল্পিত চাষ চলছে, যা দেশের মাছ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করছে।

বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ মাছ চাষ ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ১৯৯০ সালে মাথাপিছু মাছের পরিমাণ ছিল ৭.৫ কেজি, যা এখন ৩০ কেজিতে পৌঁছেছে।

বিশ্বের মিঠা পানির মাছের ১১.৭ শতাংশ বাংলাদেশে

এফএও-এর প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে ১৩.২২ লাখ টন মিঠা পানির মাছ উৎপাদিত হয়, যা বিশ্বের মোট মাছ উৎপাদনের ১১.৭ শতাংশ। আগের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবদান ছিল ১১ শতাংশ।

১৮.৯ লাখ টন উৎপাদন নিয়ে ভারত এবার এই তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে। অন্যদিকে ১১.৬৬ লাখ টন উৎপাদন নিয়ে চীন তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে। চীনের পরে রয়েছে মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া ও উগান্ডা।

২০২২ সালে বিশ্বের প্রতিটি দেশে উৎপাদিত মাছের রেকর্ড নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মিঠা পানির মাছের উৎপাদন ১৯৮০ সালে ছিল ৪.৪ লাখ টন। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৫ লাখ টন।

চীনে খোলা জলাশয়ের মাছ উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে ২০১৭ সালে এই উৎস থেকে ২২ লাখ টন মাছ উৎপাদিত হয়েছিল।

তবে দেশটির অন্যতম প্রধান মাছের উৎস ইয়াংজি নদীতে ২০২০ সালে ১০ বছরের জন্য মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। অতিরিক্ত আহরণের কারণে ওই নদীর মৎস্য সম্পদ ফুরিয়ে আসছিল।

তাই আবার সেই সম্পদ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এ কারণে গত দুই বছর ধরে চীনের মোট মাছ উৎপাদন কমছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মিঠা পানি ও চাষ করা মাছ উৎপাদনে এগিয়ে থাকা বিশ্বের অধিকাংশ দেশই এশিয়া মহাদেশের। এই অঞ্চলের নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে মাছ চাষ বেশি প্রচলিত।

বিশেষ করে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় অধিক নদী ও জলাভূমি থাকায় সেখানে মিঠা পানির মাছ আহরণ ও চাষের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি এবং পুষ্টির চাহিদা মেটাতে মাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এশিয়ার বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পাশাপাশি আফ্রিকার মিশর খামারে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এইসব দেশের জনগণের ৫০ শতাংশের বেশি প্রোটিনের চাহিদা মেটানো হচ্ছে মাছ থেকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ইলিশের প্রজনন সহজতর এবং জাটকা (ছোট ইলিশ) রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়ার কারণে বাংলাদেশ খোলা জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, দেশের হাওর ও বিলের অন্যান্য ছোট ও মাঝারি আকারের মাছকেও প্রজনন মৌসুমে সুরক্ষা দিতে হবে। এভাবে পুষ্টিকর ছোট মাছের উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব হবে। একই সঙ্গে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ উৎপাদন ও সংগ্রহ বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।

সূত্র: প্রথম আলো থেকে অনুদিত

বাংলাদেশ সময়: ২১:০০:০৪ ● ১২৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ