রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন:পর্ব- ২৯৩:-জালাল উদ্দীন মাহমুদ

Home Page » সাহিত্য » রঙে ভরা আমার ব্যাংকিং জীবন:পর্ব- ২৯৩:-জালাল উদ্দীন মাহমুদ
মঙ্গলবার ● ১৩ জুন ২০২৩


জালাল উদ্দীন মাহমুদ

ছুটি নিয়ে ছুটাছুটি -৫

এরপর ডিজিএম হিসাবে যোগদান করলেন অন্য এক স্যার তার কথা একটু বিশেষভাবেই বলতে হয়। কারন এ স্যারের সাথে আমি অনেকদিন কাজ করেছি। অনেক স্মৃতি। থাক। সে সব না হয় অন্য এক অধ্যায়ে বলব। আজ শুধু ছুটি নেবার অধ্যায়টিই বলি। এ স্যার যোগদানের পরপরই ঐ স্টাফ অফিসার বলল, দেশী ভাই আগে যেভাবে ছুটি নিয়েছেন এ ডিজিএম সাহেবের নিকট থেকে আপনি সেভাবে ছুটি নিতে পারবেন না। আমিও আর রিস্ক নিয়ে আপনাকে ও ভাবে ছুটিতে পাঠাতে পারব না। কারন স্যারকে আমি দীর্ঘদিন যাবৎ চিনি। উনি নিয়ম নীতির বিষয়ে অনড় প্রকৃতির। আমি যদি তার অনুমোদন না নিয়ে আপনাকে ছুটি দেই তবে উনি আমাকে ধরবেন।। আপনি তাকে ডাইরেক্ট বলেন ।
- বারবার ছুটির তদবির করতে আমার লজ্জা লাগে। আমি তাকে আমার মনের কথাটা বললাম। সে দেখি এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল ।
- লজ্জা ! কিসের লজ্জা ? আপনি পুরুষ মানুষ না ?
এ কথার কী উত্তর দিব ? নীরব থাকলাম। সে-ই নীরবতা ভাঙ্গল ।
-ভাইজান আপনার যন্ত্রটা সাথে আছে নাকি ?
-সাথে আছে মানে ?
-মানে যন্ত্রটা প্যান্টের পকেটের ভিতর আছে ?
- কোন যন্ত্রটা ?
- মোবাইল ফোনটা । আপনি তো হাতেই রাখেন। আজ দেখছি না। ভাবলাম টেবিলের ড্রয়ারে রেখে এসেছেন কি –না।
হ্যাঁ , টেবিলের ড্রয়ারেই রেখে এসেছি।
-দেশের বাড়িতে একটু জরুরী কথা বলতাম।
আমি মরি আমার জ্বালায় আর সে আছে তার ধান্ধায় । কী আর করা মোবাইলটা এনে তার হাতে দিলাম দেশের বাড়িতে আগের মতই কথা বলল।
এ দিকে আমি পড়লাম মহা ভেজালে। আমাকে তো রংপুর ক্যাডেট কলেজে যেতেই হবে। পিতৃ হৃদয়ের তাড়নায় আকুল আমি। ছেলেও আমার অপেক্ষায় থাকবে। পিতা-পুত্র মিলনের ক্ষনগুলো তখন কী মধুর ছিল। পুত্র বড় হবার কারনে যা আজ হয়তো তার মন থেকে হারিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও আমার মন সেই আগের মতোই আছে।যদিও মাসে মাসে তো দুরের কথা বছরেও তার সাথে আমার দেখা হবার এখন আর সুযোগ নাই। জগতের সকল পিতাই কি একদিন এরকম অদৃশ্য বিচ্ছেদ বেদনায় একসময় ভুগে থাকেন। জানিনা। আমার ছাড়া আমি আমার বাপ- দাদার পিতৃহৃদয়েরও সন্ধান পেয়েছিলাম। সেখানে শুধু নিম্নমুখী স্নেহ দেখেছি । আমি বাপ- দাদার বেলায় ঊর্ধ্বমুখী প্রতিদান দিতে পারিনি । আমি আমার পুত্রের কাছে তা আশা করব কোন বিচারে।
কথায় কথা বাড়ে। ছুটির কথাতেই থাকি। আমার দুঃখের কথা শুনে স্যারের একান্ত পিওন বাকি বিল্লাহ সেদিন আমাকে একটা টোটকা বুদ্ধি ‍দিল। সে আমার কাছে ছুটির দরখাস্ত চাইল। বলল এ দরখাস্ত সে স্যারের টেবিলে রেখে দিবে। স্যারের নজরে এ দরখাস্ত পড়লে স্যার আমাকে কল করবে। আপনার হাতে অনেক কাজ তাই দেখা করলে নির্ঘাৎ ছুটি হবে না।স্যার কল করলে আমি যেন চেম্বারে না যাই। যা বলার সে-ই বলবে। পরে ছুটি থেকে ফিরে আসলে স্যার যদি বলে বা আমাকে ধমক দেয় তখন আমার ছুটি যে জরুরী ছিল এবং ছুটি নিয়ে আমার যে উপকার হয়েছে তা যেন ডিজিএম স্যারকে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলি। তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। এ পিয়ন এর আগেও এ ডিজিএম স্যারের সাথে কাজ করেছে। তাই স্যারের নাড়ি নক্ষত্র তার জানা। তারপরও আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি কোনও অসুবিধা হবে নাতো ? দূর স্যার - কি অসুবিধা হবে ? ডিজিএম স্যার তার অপছন্দের কাজটা আগে আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু আটকাতে না পারলে মানে কাজটা হয়ে যাবার পর আর তেমন তদন্ত করে না। বুঝলাম পিওন বাকীবিল্লাহ অনেক জ্ঞান রাখে আর স্যার অনেক বাস্তববাদী। ছুটি কাটানো শেষ হলে কথা বলে কী লাভ ? যে বাচ্চা ভুমিষ্ঠ হয়ে গেছে তাকে তো আর মায়ের পেটে ঢোকানো যাবে না।
ছুটির দরখাস্ত দিলাম বিকালে। দরখাস্ত দেয়ার ঘন্টাখানেক পরই স্যার আমাকে ডেকে পাঠালেন। পিওন বলল আপনি নিচ থেকে একটু ঘুরে আসেন। আর আজ ঠিক পাঁচটায় বের হয়ে যাবেন। এরপর যা করার আমিই করব। তার প্ল্যান মোতাবেক সব কাজ করে আমি ছুটিতে গেলাম। ছুটি থেকে ফিরে এসে কোনও এক কাজে ডিজিএম স্যারের চেম্বারে গেলে উনি সাথে সাথে আমাকে চার্জ করে বসলেন-ছুটির দরখাস্ত দিয়েই আপনি সটকে পড়েছিলেন কেন?
-সটকে পড়িনি স্যার।
-সটকে পড়েন নাই মানে? কিছুক্ষন চুপ থাকলেন। তারপর স্যার একটু গলা নামিয়ে যুক্তি দেখালেন।
-ছুটির দরখাস্ত দিলেই ছুটি হয়?
-জরুরী ছিল স্যার।
-যতই জরুরী হোক একজন এসপিও হিসেবে আপনার উচিৎ ছিল –আমার সাথে সাক্ষাৎ করে ছুটি নিয়ে ষ্টেশন ত্যাগ করা। ঠিক কিনা বলেন?
স্যারের যুক্তি অকাট্য। বেঠিক বলি কেমনে? কি উত্তর দেয়া যায় ভাবছি। হঠাৎ পিয়নের শেখানো কথা মনে পড়ে গেল। হাসি হাসি মুখ করে যতদূর সম্ভব মোলায়েম সুরে বললাম,-স্যার আপনি হয়তো আমার উপর অখুশি হয়েছেন। কিন্তু যে কাজে ছুটি নিয়েছিলাম সে কাজটি হয়েছে স্যার।
স্যার আমার কথা লুফে নিলেন। বললেন,-কাজটি হয়েছে তা হলে?
-জ্বী স্যার হয়েছে।
-গুড, এখন অফিসের কাজ কর্মের দিকে মনোযোগ দেন। আপনার হাতে অনেক ফাইল। অনেক কাজও দেখলাম পেন্ডিং আছে। একটু সকাল সকাল অফিসে আসবেন আর লেট করে যাবেন তাহলেই দেখবেন সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বেন। এখন যান।
-জ্বী স্যার। আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়া আলাইকুমাস সালাম।
এরপর যতবারই ছুটি নিয়েছি একইভাবে শেষ বিকালে ছুটির দরখাস্ত জমা দিতাম। ছুটির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার জন্য স্যার ডাকলে তার চেম্বারে তখন আর যেতাম না। ছুটি শেষ করে এসে একই কায়দায় বলতাম-স্যার আপনি মন খারাপ করেছেন বটে, তবে যেজন্য ছুটি নিয়েছিলাম সে কাজটি হয়েছে স্যার। কি কাজ, স্যার তা আর জানতে চাইতেন না। আমিও জানাতাম না। কাজটা হয়েছে-শুনলেই স্যারের চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠত।
আজ মনে হচ্ছে -স্যার বোধহয় সারাজীবনে শুধু নেগেটিভ কথা শুনেছেন, তাই যে কোনও একটা পজেটিভ কথা শুনলেই খুশি হতেন।
যা হোক ছুটি নিয়ে অনেক কথা হলো সপ্তপদী মার্কেট শাখার সেই তাহমিনার কথায় আবার ফিরে আসি।
তাহমিনাকে নিয়ে মহালজ্জাকর সেই কাহিনিটা এবার শুরু করতে চাই।
পরবর্তী পর্ব আগামীকাল

বাংলাদেশ সময়: ১০:১৩:০৮ ● ২৯০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ