ঐশ্বরিক চেতনার কবি

Home Page » ইতিহাস » ঐশ্বরিক চেতনার কবি
সোমবার ● ২ জুন ২০২৫


 ঐশ্বরিক চেতনার কবি

কাজী নজরুল ইসলাম আধুনিক যুগের বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবিদের একজন। কবিতার ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর– এদের পরে যে নতুনধারার কবিতা রচিত হয়েছে– সেই ধারার এক শাখায় রয়েছেন কাজী নজরুল, আরেক শাখায় রয়েছেন জীবনানন্দ দাশ। দুজনই সেই সময়ের শ্রেষ্ঠ কবি। এই দুজন দুই ধারার অনুভূতি ও উপলব্ধির অধিকারী ছিলেন। নজরুল ছিলেন জনগণের একজন। জনকল্যাণে তিনি সমস্ত শক্তি, চিন্তা ব্যয় করেছেন। এরই মধ্য দিয়ে অসাধারণ কবি-প্রতিভারও পরিচয় দিয়েছেন। অন্যদিকে জীবনানন্দ ছিলেন ভিন্ন অনুভূতি উপলব্ধির কবি। তাদের জীবৎকালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং আনুষঙ্গিক আরও অনেক নেতিবাচকতা পাশ্চাত্য সভ্যতায় দেখা দেয়। রেনেসাঁসের নামে মানুষের উন্নত আবেগ-অনুভূতি ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের যে সম্ভাবনা কবি-সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানীরা দেখতেন, তা ওই সমস্ত নেতিবাচক ঘটনার পরে আর অব্যাহত থাকেনি। হতাশা, সবকিছু সম্পর্কে অনাস্থা, মানুষ সম্পর্কে ধারণার অনেক পরিবর্তন ঘটে যায়। আগে ধারণা ছিল, মানুষ সবকিছু্ পারবে। রাতারাতি হয়তো পারবে না, কিন্তু প্রজন্মান্তরের চেষ্টায় পারবে। উন্নতি থেকে আরও উন্নতির দিকে মানুষ যাবে। এ ধরনের আশাবাদী ভবিষ্যৎ চিন্তা নিয়ে তখন কবি-সাহিত্যিকরা যে অনুভূতি ও উপলব্ধি প্রকাশ করতেন, তা আর তখনকার কবিদের মধ্যে পাওয়া যেত না। বরং জীবনের দুঃখময় দিকগুলোই তারা মহিমান্বিত করতে ও বড় করে দেখানো শুরু করেন। জীবনের নানান দিক থেকে মানুষের এই দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থার ভাব, চিত্র জীবনানন্দের কবিতায় এসেছে। অনেকে বলেছেন জীবনানন্দ নৈরাশ্যবাদী ছিলেন, যদিও তা সত্য মনে করি না। অপরদিকে কবি নজরুল ইসলাম অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সংগ্রামী মানুষের বিজয় দেখিয়েছেন তাঁর কবিতায়, প্রবন্ধে, কথাসাহিত্যে।
নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা তাঁর কাব্যজীবনের একদম প্রথমদিকে লেখা। এই কবিতা লেখার পর থেকেই তিনি বাংলাভাষী সব অঞ্চলে কবিখ্যাতি লাভ করেন। এই কবিতায় অন্যায় অবিচার, ধর্মের নামে অনাচার– এই সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের চেতনা ব্যক্ত হয়েছে। মানুষের যে মনুষ্যত্ব সেটিকে তিনি খুব বড় করে দেখেছেন এবং বলতে চেয়েছেন— বর্তমানের কলঙ্কজনক কোনো ঘটনা তাকে কিছুদিনের জন্য পেছনে ফেলতে পারে, কিন্তু মানুষ শেষ পর্যন্ত তাকে অতিক্রম করবে। দুঃখ ও দুর্দশা কাটিয়ে সে ক্রমাগত উন্নতির দিকে যাবে। জীবন ও জগতের সব রহস্য মানুষ একদিন উন্মোচন করতে পারবে। ধর্মগ্রন্থ কিংবা ঈশ্বরের ওপরে নির্ভর করে নয়, মানুষ তার স্বাধীন চিন্তাশীলতা এবং উন্নত আবেগ-অনুভূতি দিয়ে জগৎকে নতুন করে গঠন করবে। মানুষের পরাজয় সাময়িক। জয়টাই অবশ্যম্ভাবী। ঐশ্বরিক ক্ষমতা মানুষের মধ্যেও আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৫:০৫ ● ৫৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ