
বঙ্গ নিউজ ডেস্ক:যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস অঙ্গরাজ্যে অভিবাসীবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের পাশাপাশি ন্যাশনাল গার্ড সদস্য ও মেরিন সেনা মোতায়েন করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। অন্তত ৭০০ মেরিন সেনা অস্থায়ীভাবে শহরটিতে বিক্ষোভ দমনে কাজ করবেন। সেই সঙ্গে ন্যাশনাল গার্ডের আরও সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে রাস্তায় নেমে এমন কঠোর বিক্ষোভ আর হয়নি। এ বিক্ষোভ টেক্সাসসহ দেশটির অন্যান্য অঙ্গরাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে।
স্থানীয় সময় সোমবার ট্রাম্প প্রশাসন লস অ্যাঞ্জেলেসে মেরিন সেনা মোতায়েনের আদেশ দেয়। রাতে ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকো শহরের সিভিক সেন্টার ও মিশন উপকণ্ঠে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসেন। ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, সহিংস বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে ফেডারেল সরকারের সদস্য ও সম্পদ রক্ষায় কাজ করবেন মেরিন সেনারা। প্রশাসন আরও দুই হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ অবস্থায় চলছে ব্যাপক ধরপাকড়। গত রোববার পুলিশ ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৪৮ জনকে আটক করে। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম সন্দেহভাজন অভিবাসন নীতি লঙ্ঘনকারীদের আটকে আরও অভিযান চালানোর কথা জানান।
একেবারে ছোট আকার থেকেই সূত্রপাত ঘটে বড় অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভের। গত শুক্রবার লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের উপকণ্ঠে একটি হার্ডওয়্যার দোকানের গাড়ি পার্কিং জোনে একত্রিত হয়েছিলেন কয়েক বন্ধু। যেখান থেকে ট্রাম্পের অভিবাসন দমন অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভে দিনমজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। এরই মধ্যে কয়েক দিনমজুরের গ্রেপ্তারের গুজব ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভ তীব্রতর হয়।
বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয় ক্যালিফোর্নিয়ার হিস্পানিক অধ্যুষিত প্যারামাউন্ট শহরে। সেখানে বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষোভ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পিপার স্প্রে, রাবার বুলেট ও ধোঁয়ার বোমা ব্যবহার করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয় ও লুটপাট করে। ফেডারেল কর্তৃপক্ষ ঘটনাটিকে ‘দাঙ্গা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। এর পরপরই এসব অভিযান জোরদার হয়। সাম্প্রতিক এসব অভিযান ওয়েস্টলেক জেলা এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের দক্ষিণে প্যারামাউন্টে সংঘটিত হয়। এসব এলাকায় জনসংখ্যার ৮২ শতাংশেরও বেশি অধিবাসী হিস্পানিক।
চার দিন ধরে চলা এ বিক্ষোভ সবচেয়ে সহিংস ছিল গত রোববার। ওই দিন গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। পুলিশের অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা অশ্বারোহী টহল দলের ওপর দাহ্য বস্তু ব্যবহার করেছে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও মরিচের গুঁড়ার স্প্রে ব্যবহার করে।
বিক্ষোভ চলছে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকোতেও। সেখানে রোববার অস্থিরতার পর আরও ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তিন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। বিক্ষোভ মোকাবিলায় বিপুল সংখ্যক ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন নিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৬৫ সালের পর এই প্রথম কোনো অঙ্গরাজ্যের গভর্নরের অনুরোধ ছাড়াই ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসে কেন আইসিইর বড় অভিযান
লস অ্যাঞ্জেলেসে জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি অভিবাসী। এটা হতে পারে অভিযান পরিচালনার অন্যতম কারণও। গত মে মাসের শুরুর দিকে ইমিগ্রেশন কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) ঘোষণা করে, তারা লস অ্যাঞ্জেলেসে এক সপ্তাহের অভিযানে ২৩৯ অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। এ অবস্থায় চলতি জুন মাসের জন্য আইসিই কর্মকর্তাদের দিনে কমপক্ষে তিন হাজারজনকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করে দেয় হোয়াইট হাউস। চলমান এ অভিযান বিস্তৃত হয়ে এখন রেস্তোরাঁ ও খুচরা দোকানগুলোয়ও পৌঁছেছে।
টেক্সাসেও বিক্ষোভ
সোমবার টেক্সাসের অস্টিনে শতাধিক লোকজনের একটি বড় দল মিছিল করে জে জে পিকল ফেডারেল ভবনের দিকে যায়। ভবনটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।